বাংলাদেশে OHCHR: ভালো না খারাপ?
![]() |
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (OHCHR) বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষায় যে ভূমিকা পালন করছে, তার ইতিবাচক প্রভাব এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোর একটি চিত্র। |
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (OHCHR)-এর ভূমিকা নিয়ে আমাদের মনে প্রায়শই একটি প্রশ্ন জাগে। এটি কি দেশের জন্য 'ভালো' কিছু বয়ে আনছে? অথবা, এর কার্যকারিতা নানা সীমাবদ্ধতা আর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে 'খারাপ' দিকে মোড় নিচ্ছে? এই জটিল প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর নেই। বরং, এর ইতিবাচক অবদান এবং চলমান উদ্বেগ—উভয় দিকই গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই নিবন্ধে আমরা বিশ্লেষণ করব, বাংলাদেশে OHCHR: ভালো না খারাপ?
OHCHR-এর 'ভালো' দিক: আশার আলো ও জবাবদিহিতার পথOHCHR নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এক গুরুত্বপূর্ণ 'ভালো' ভূমিকা পালন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় তৎকালীন সরকার নৃশংস দমন-পীড়ন চালিয়েছিল আসলে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুরোধে শুধু তাই নয়, তারা ২৫০টিরও বেশি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। পাশাপাশি, ৯০০টিরও বেশি ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন তথ্য-অনুসন্ধান মিশনের মূল অনুসন্ধান২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি আর এর মধ্য দিয়ে ওএইচসিএইচআর-এর কাজের গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে তোলে:
ফলস্বরূপ, এই প্রতিবেদনটি দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এটি নিরাপত্তা ও বিচার খাত সংস্কারের জন্য বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রদান করেছে স্থায়ী OHCHR মিশনের প্রতিষ্ঠাতাছাড়া, ২০২৫ সালের ১৮ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটি তিন বছরের সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয় এর কারণ হলো, এই মিশনের উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় সহায়তা করা এভাবে, এই দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতি মানবাধিকার সুরক্ষায় গভীর ও টেকসই প্রভাব ফেলতে পারে। এটি সাময়িক হস্তক্ষেপের চেয়েও বেশি কার্যকর হবে। দেশের শাসন কাঠামোর মধ্যে মানবাধিকার নীতিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার দিকে এটি একটি কৌশলগত পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। OHCHR-এর 'খারাপ' দিক: চলমান চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাতবে, ওএইচসিএইচআর-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনও 'খারাপ' রয়ে গেছে। এর কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশে OHCHR: ভালো না খারাপ? এই প্রশ্নের 'খারাপ' দিকগুলো কী কী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে মানবাধিকারের চিত্র
সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গিএছাড়াও, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলিও ওএইচসিএইচআর-এর প্রভাবের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যেমন, তবে, তারা জোর দিয়ে বলেছে যে "জাতিসংঘের এখানে তার প্রচেষ্টা বন্ধ করা উচিত নয়" তাই, তারা অব্যাহত পর্যবেক্ষণ, স্বাধীন তদন্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে সরকারি শর্ত ও দায়মুক্তির গভীর সংস্কৃতিতবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ওএইচসিএইচআর মিশনের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলেও, এটি নির্দিষ্ট শর্তাবলী সহ করেছে উদাহরণস্বরূপ, এর মধ্যে রয়েছে "মতাদর্শগত অভিমুখ" সম্পর্কে উদ্বেগ এছাড়াও, "দেশের প্রতিষ্ঠিত আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে কোনো সামাজিক এজেন্ডা প্রচার করবে না" এমন শর্তও রয়েছে শুধু তাই নয়, সরকার স্পষ্টভাবে "চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করার সার্বভৌম ক্ষমতা" বজায় রেখেছে ফলস্বরূপ, এই শর্তগুলি ওএইচসিএইচআর-এর কাজের বর্ণনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে। এটি এর পরিধিও নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে ওএইচসিএইচআর-এর কার্যকারিতা সীমিত হতে পারে। এছাড়াও, দায়মুক্তির গভীর-মূল সংস্কৃতি বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য একটি পদ্ধতিগত বাধা হিসাবে রয়ে গেছে কারণ, প্রাক্তন সরকার নিরাপত্তা বাহিনী বা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত গুরুতর লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত বা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কোনো প্রকৃত প্রচেষ্টা করতে ব্যর্থ হয়েছিল দুর্ভাগ্যবশত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেও আইন প্রয়োগে চলমান ব্যর্থতা এবং অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে একটি জটিল ভারসাম্যসব মিলিয়ে, তাহলে, বাংলাদেশে OHCHR: ভালো না খারাপ? এর উত্তর সরলভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ওএইচসিএইচআর-এর উপস্থিতি নিঃসন্দেহে অপরিহার্য। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ঘটনাগুলো উন্মোচন করে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। আসলে, এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি বিশ্বাসযোগ্য চিত্র তুলে ধরেছে। এটি জবাবদিহিতার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে। এই অর্থে, এটি অবশ্যই 'ভালো'। তবে, এটি একটি অত্যন্ত জটিল এবং পরিবর্তনশীল পরিবেশে কাজ করে। এখানে মানবাধিকারের উদ্বেগগুলো অব্যাহত রয়েছে এবং নতুন রূপ ধারণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। ওএইচসিএইচআর-এর মিশনের ওপর আরোপিত শর্তাবলী এর কার্যকারিতাকে সীমিত করতে পারে। তাছাড়া, দায়মুক্তির গভীর-মূল সংস্কৃতি এখনও একটি পদ্ধতিগত বাধা হিসাবে রয়ে গেছে। এই দিকগুলো বিবেচনা করলে, পরিস্থিতিকে 'খারাপ' বলা যেতে পারে। পরিশেষে, ওএইচসিএইচআর-এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নির্ভর করবে এর অব্যাহত সম্পৃক্ততার ওপর। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রকৃত প্রতিশ্রুতি এবং পদ্ধতিগত দায়মুক্তির চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতার ওপরও নির্ভরশীল। এ কারণে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক নজরদারি এবং সংস্কারের জন্য সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওএইচসিএইচআর একটি আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করছে। তবে মনে রাখতে হবে, এই পথটি এখনও দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। সব মিলিয়ে, এটি 'ভালো' এবং 'খারাপ' এর একটি জটিল মিশ্রণ। এখানে প্রতিটি পদক্ষেপই দেশের মানবাধিকার ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। |
Comments
Post a Comment